@@দ্বাদশ বর্ষে কোজাগরী@@ প্রবীর বারিক @@

 @@দ্বাদশ বর্ষে কোজাগরী@@ প্রবীর বারিক @@


জন্মভূমি গ্রামটি আমার 
সবুজ পাতায় মোড়া 
যতদূরেই যাইনা কেন
স্মৃতি নাড়ে কড়া।


বড় হয়ে ভুলে গেলি তুই
মাতৃসমা গ্রামকে
মেঠোপথের স্নেহমাখা
ধুলায় লুটানো ঘ্রামকে।


সকাল হলেই পাখির ডাকে
ভাঙতো যেথায় ঘুম
পল্লিমেয়ের নূপুর ধ্বনি
কানে বাজে রুমঝুম।


শাল আঁতাড়ির মাজন নিয়ে
দৌড়ে যেতাম বটতলে
সকাল সকাল মুখ ধুয়ে নিই
স্কুলের ওই টিপকলে।


মাটির মেঝে খড়ের চালা
কি অপরূপ লাগতো রে
গরম শীতে দিব্যিকাটে 
দুঃখ কষ্ট ভাগতো রে।


বাড়ি বাড়ি ছিল কুয়ো 
কপিকলের ঘড় ঘড়ানি
দড়ির টানে উঠতো জল
ছিল না ইলেকট্রিকের ধড় পড়ানি।


চটের বস্তা নিয়ে কাঁধে
সবাই যেত বিদ্যালয়ে
উচ্চস্বরে চলত পড়া
ভগী মাস্টারের লাঠির ভয়ে।


বছর বছর হতো উৎসব
গ্রামে থাকা আশ্রমেতে 
বসত মেলা পথের দুধার
ভক্তের ভিড় দিবারাতে।


বায়া বাবাজির সুর কীর্তন
শোনা যেত কালি মন্দিরে
কালীপুজোয় পটকা বাজি
স্মৃতির ঘরে বন্দিরে।


পুজো পার্বণ অনুষ্ঠানে
ভিডিও দেখার চলছিল
খোলা আকাশের নিচে বসা
রাত গুলো কে কেড়ে নিল।


পাড়ায় পাড়ায় ভাইয়ে বোনে 
ভালোবাসার টান ছিল
বিকেল হলে গ্রামের মোড়ে 
গল্প শোনার প্রাণ ছিল।


কলসী কাঁধে সাঁঝের বেলা
জল আনতো মায়েরা 
বাঁক ভর্তি ধানের বোঝায়
ফিরত চাষি ভায়েরা।


কষ্ট ছিল বেদনা ছিল
ছিল অনাবিল সুখ
সেদিনের কথা ভাবতে বসে
ভেসে ওঠে চেনা মুখ।


হাতে মার্বেল ছোট্ট টায়ার
মোবাইলহীন সঙ্গী
কিত কিত কিত সীতাহরণ 
হা ডু ডু খেলার ভঙ্গী।


যে গ্রাম মোরে দিয়েছে প্রাণ
কি করে তোমারে ভুলি 
তোমার ছবি আঁকতে বসে
হস্তে ধরেছি তুলি।


লক্ষীমায়ের আরাধনাতে 
মেতেছে ডোকরাবাসী 
কোলের শিশু বৃদ্ধ বৃদ্ধার 
মুখেতে ফুটেছে হাসি।


আমারে যারা দিয়েছো সুযোগ
মঞ্চে পেতেছো আসন
তোমাদের কথা বলবো আজি
দেবোনা জটিল ভাষণ।


আলো ঝলমল জন কোলাহল
হরিমঞ্চের পাশে
মনের ভক্তি জাগিয়ে তোলে
আকাশে বাতাসে ভাসে।


ধনের দেবী লক্ষীমাতা
দিলেন স্বপ্নে দেখা
সেদিন থেকেই পূজার্চনা
কোজাগরী ব্রত শেখা।


উঠতি বয়সী ছেলেদের দল
মাতৃসেবা ও ভালোবাসায়
কঠোর শ্রমে দৃঢ় মনোবলে
ভক্তি সাগরে হৃদয় ভাসায়।


মাথার ঘর্ম পায়েতে ফেলে
দিয়েছে পুজোর চাঁদা 
মাতৃচরণে সঁপেছে জীবন
হাসিতে ভুলেছে কাঁদা।


একক দশক পূর্ণ করে
দ্বাদশ বর্ষে পদার্পণ
এক যুগ ধরে একতার সনে 
এগিয়ে চলেছে বিজয় রণ।


যাত্রাপথটা ছিল না বন্ধুর
শত বাধা আসে সম্মুখ
দাঁতে দাঁত চেপে হাতে হাত রেখে
সফলতায় ভরেছে বুক।


মৃন্ময়ী মা লক্ষ্মী স্বয়ং
বিরাজ করেন দ্বারে
চিন্ময়ী রূপে আশীর্বাদে
মস্তক দেন ভরে।


ঊষর মাটি লাঙল চষে
শস্যদানা ফলে
আলতা পায়ে লক্ষ্মী মায়ে 
গুটি গুটি পথ চলে।


হে মা লক্ষী কৃপা করো আজ
ডোকরা গ্রামের তরে
কোজাগরীর প্রদীপ জ্বলুক
সবার ঘরে ঘরে।


প্রতিটি গৃহে লক্ষী রূপে
বিরাজ করেন মাতা
ধনসম্পদ ঐশ্বর্যের
তিনিই হলেন ত্রাতা।


আমার গ্রামের ঠাকুমা মায়েরা
দিদি বোন কন্যা বধূরা 
সবাই জ্যান্ত লক্ষী
পুরুষজাতি দাদা ভাইদের তারাই জীবন রক্ষী।


তোমাদের দিশা স্বপ্ন সংকল্প
পূর্ণ হোক সকল লক্ষ্য
ধর্মের দ্বারা মানব মিলনে 
ফুটুক হৃদয়ে মোক্ষ।


জোছনা ভেজানো কোজাগরী রাত
শিশির স্নাত মাটি
প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে
মাতারা পেতেছে পাটি।


বুকের শিশু কেঁদে ওঠে ঘরে 
মাতা যে বসেছে ধ্যানে
সকল গ্রামের বধূরা জুটে
পদ্মাসনার জ্ঞানে।


নিদ্রা তন্দ্রা উড়েছে সবার
মা কমলার আবাহনে 
গোল গোল আঁখি জেগেছে রাতি
শুভ্র প্যাঁচার বাহনে।


সাড়া দাও মাতা হয়ো না পাষাণ
দ্বি প্রহর হল পার
সম্মুখে মোর জাগ্রত হোক 
দিব্যমূর্তি স্নেহ বদনা
পুষ্পখচিত স্বর্গদ্বার।


নমো নমো লক্ষী মাতা
মম ভ্রম আজি ক্ষমো 
সুখ সমাহার ভরিয়ে তোলো
বৈকুণ্ঠের সম।


ধনীর প্রাসাদে বন্দী থেকো না
গরীব কুটিরে এসো
ভক্তি ভরে ডাকছে যারা 
তাদের ও ভালবেসো ।


ঘটা করে করো মায়ের পুজো
ঘৃণা করো নিজ মাকে
চোখের জলেতে ভরায় আঁখি
নীরবে তোমারে ডাকে।


পত্নী কাঁদে অত্যাচারে
অবহেলা পায় কন্যা
মাটির প্রতিমা আসনে বসাও
আয়োজনে আলো বন্যা।


যেদিন মেয়েরা বাড়ির মায়েরা
পাবে সম্মান ভালোবাসা
সেদিন ধরাতে আসবেন দেবী
কাটাতে বিঘ্ন সর্বনাশা ।


এসো মোর প্রিয় গ্রাম্যবাসী
শপথ করিগো আজি
নারী জাতিকে করে সম্মান
গৃহলক্ষীর প্রদীপ সাজি।


শিক্ষা ক্রীড়া সংস্কৃতিতে
থাকবো মোরা প্রথম সারি
ব্লক ছাড়িয়ে জেলাস্তরে 
ডোকরার নাম করবো ভারি।


আমার গ্রাম আমার প্রাণ
এ মাটি সোনার তুল্য 
গ্রামের বৈচিত্র্য অতীত ঐতিহ্য
জীবনে সবচেয়ে দামি।



Post a Comment

0 Comments