এক মাসের মধ্যে দুই তৃণমূল কর্মী নৃশংস খুন, বিজেপির ৩৫ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নন্দীগ্রাম থানার আইসি বদল করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা
মাত্র এক মাসের ব্যবধানে নন্দীগ্রামে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন দুই তৃণমূল কর্মী। এই নিয়ে ক্রমেই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলের অন্দরে। অবশেষে তৃণমূলের এই ক্ষোভ সামাল দিতে নন্দীগ্রাম থানার আইসিকে বদলি করে দেওয়া হল বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর। নন্দীগ্রাম থানার আইসি অনুপম মন্ডলকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ডিআইবিতে। তাঁর জায়গায় থানার দায়িত্ব দেওয়া হল ডিএসপি তুহিন বিশ্বাসকে। প্রসঙ্গতঃ বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের সাতেঙ্গাবাড়িতে তৃণমূল কর্মী মহাদেব বিষয়ীকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তার আগে গত ৮ ডিসেম্বর কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭নং জালপাই গ্রামে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী বিষ্ণুপদ মণ্ডল। এই দুই ঘটনা ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনার মাঝেই শুক্রবার নন্দীগ্রাম থানার আইসি বদলের ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। যদিও জেলা পুলিশ সূত্রে দাবী, নেহাতই রুটিন বদলি করা হয়েছে নন্দীগ্রাম থানার আইসিকে।বৃহস্পতিবার সকালে সাতেঙ্গাবাড়িতে নিজের অস্থায়ী মাংস কাটা দোকানের ভেতর রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল গোকুলনগরের দক্ষিণ বৃন্দাবনচকের বাসিন্দা মহাদেবের মৃতদেহ। এই ঘটনার পর এলাকার প্রায় ৩৫ জন বিজেপি নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। শুক্রবার সন্ধ্যায় মহাদেবের মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল কর্মীরা মিছিল করে মৃতদেহ নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদিন নন্দীগ্রামে মৃতের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ দোলা সেন। এই মুহূর্তে এলাকার আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ জানান তিনি। তৃণমূলের দাবী, দিন পনের আগে মহাদেবকে মারধর করা হয়েছিল। সেই নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও ক্ষোভে ফুটছে নন্দীগ্রাম। তৃণমূলের নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গের স্পষ্ট দাবী, “মহাদেবকে পিটিয়ে খুন করেছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই। এর আগে বিষ্ণুপদকে খুনের ঘটনাতেও বিজেপির লোকেরাই জড়িত। এলাকার বিজেপি নেতাদের মদতেই এই হামলা ও খুন সংঘটিত হচ্ছে। তবে এভাবে তৃণমূলকে দমানো যাবে না” বলেই দাবী জানিয়েছেন বাপ্পাদিত্য।এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর জলপাই গ্রামে বাড়িতে ঢুকে তৃণমূলের বুথ সভাপতি গুরুপদ মন্ডল ও তাঁর ভাই বিষ্ণুপদ মণ্ডলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বিষ্ণুপদ’র মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাতেও অভিযোগের আঙুল বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধেই উঠেছিল। তবে এই দুটি ঘটনাতেই নিজেদের কেউ জড়িত নয় বলেই দাবী বিজেপি নেতৃত্বের। বৃহস্পতিবার সাতেঙ্গাবাড়ির ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সংবাদমাধ্যমে জানান, “কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাতেঙ্গাবাড়িতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হল, তাঁর পরিবারের দাবীই বা কী তা স্পষ্ট করে জানব। এই বিষয়ে আমি কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য রাখব না। আগে পরিবারের লোকেরা কি দাবী করেছে দেখব তার পরেই আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করব”।
0 Comments